নড়াইল-২ আসনের সাংসদ মাশরাফি বিন মুর্তজা গতকাল শনিবার নড়াইল সদর হাসপাতালে আকস্মিক পরিদর্শনে যান। এ সময় চিকিৎসকের অনুপস্থিতি, রোগীদের খাবার না দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ করেন রোগী ও স্বজনেরা। এ ঘটনায় সাংসদ মাশরাফি ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশের পর হাসপাতালের আট চিকিৎসক, দুজন ল্যাব টেকনিশিয়ান ও একজন কুক মশালচিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. আসাদ-উজ-জামান।
রোগী ও উপস্থিত লোকজন জানান, কাউকে না জানিয়ে সাংসদ মাশরাফি গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে হাসপাতালে ঢোকেন। তিনি বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখেন। এ সময় বহির্বিভাগের অধিকাংশ চিকিৎসক উপস্থিত ছিলেন না। রোগীরা চিকিৎসকের অপেক্ষায় ছিলেন। শৌচাগারসহ অন্যান্য জায়গা অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন দেখতে পান তিনি। চিকিৎসকদের ছুটি নেওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়ম দেখতে পান। হাসপাতালে প্রায় এক ঘণ্টা অবস্থান করে চলে যান। আধা ঘণ্টা পর আবার তিনি হাসপাতালে আসেন। তখনো সব চিকিৎসককে পাননি। এ নিয়ে অসন্তোষ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি।
সাংসদ ও জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার কাছে রোগী ও স্বজনেরা অভিযোগ করেন, ভর্তি রোগীদের চিকিৎসকেরা দিনে একবার দেখতে আসেন। রোগীদের অবস্থা বেহাল হয়ে পড়লেও চিকিৎসকদের পাওয়া যায় না। শিশু ওয়ার্ডে গেলে রোগীরা অভিযোগ করেন, ১৭ রোগীর মধ্যে ১৪ জনকে আগের রাতে খাবার দেওয়া হয়নি।
পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে সাংসদ মাশরাফি বলেন, ‘অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ পেয়ে আসছি। এত দিন হাতে প্রমাণ ছিল না। আজ নিজে দেখতে পেলাম। এখন আপনি এসব ব্যাপারে আপনার করণীয় যা তা–ই করেন। আপনি সিদ্ধান্ত দেন। হাসপাতালে দূরদূরান্ত থেকে গরিব রোগী আসেন। তাঁদের খাবার দেওয়া হয় না। চিকিৎসকেরা ঠিকমতো অফিস করেন না। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. আসাদ-উজ-জামান প্রথম আলোকে বলেন, সাংসদ মাশরাফি হাসপাতালে আসেন সকাল পৌনে নয়টার দিকে। আট চিকিৎসক ও দুজন ল্যাব টেকনিশিয়ান হাসপাতালে উপস্থিত হন সোয়া নয়টার দিকে। দেরিতে উপস্থিত হওয়ায় তাঁদের কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া শিশু ওয়ার্ডে গত শুক্রবার রাতে ১৭ রোগীর মধ্যে ১৪ জনকে রাতে খাবার না দেওয়ায় কুক মশালচি রাজু শেখকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। তাঁদের তিন দিনের মধ্যে জবাব দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
যে আট চিকিৎসককে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে, তাঁরা হলেন অনিতা সাহা, মো. আলিমুজ্জামান, এ এইচ এম শাহীনুর রহমান, মঞ্জুর মোর্শেদ, ফাতিমাতুজ জোহরা, সুতপা রানী সাহা, কেয়া রানী সাহা ও রাবেয়া আফরোজ। এ ছাড়া ল্যাব টেকনিশিয়ান সুজয় কুমার বিশ্বাস ও আবদুর রহিমকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে একই হাসপাতালে ঝটিকা সফর করে নানা অনিয়ম পান সাংসদ মাশরাফি। এরপর কয়েক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনায় আসেন ক্রিকেটার ও সাংসদ মাশরাফি বিন মুর্তজা।
বিজ্ঞাপন
0 মন্তব্যসমূহ
A New Comment
Emoji