ময়মনসিংহের ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ রাকিবুল হাসান রাকিবের কথামত বিজয় দিবসের বিশেষ খাবারের আয়োজনের সমস্ত টাকা তার হাতে তুলে না দেওয়ায় হুমকি-ধমকি ও চরম অপমান করায় দোলনচাঁপা মহিলা হলের প্রভোস্টসহ ৫ জন পদত্যাগ করেছেন। তারা বুধবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ছাত্রীদের জন্য উন্নতমানের খাবার পরিবেশনের আয়োজন করে দোলনচাঁপা মহিলা হল কর্তৃপক্ষ। খাবারের জন্য পোলাও এর চাল ও খাসি কেনা হয়। খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক মোঃ রাকিবুল হাসান রাকিব উত্তেজিত হয়ে সমুদয় টাকা তার হাতে তুলে দেওয়ার জন্য নানা হুমকি-ধমকি দেন বলে জানান দোলনচাঁপা মহিলা হল প্রভোস্ট সিরাজুম মুনিরা।

প্রভোস্ট সিরাজুম মুনিরা ছাড়াও পদত্যাগ করা অন্যরা হলেন দোলনচাঁপা মহিলা হলের চারজন হাউজ টিউটর। তারা হলেন-আরিফ আহমেদ, আফরুজা ইসলাম লিপি, রাশেদুর রহমান ও ফারজানা খানম। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মোঃ হুমায়ুন কবীর পদত্যাগপত্র জমার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক মোঃ রাকিবুল হাসান রাকিব জানান, চাঁদা চাওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। শিক্ষার্থীদের অনুরোধে আমরা দুটি হলের খাবারের আয়োজন একসাথে করতে চেয়েছিলাম। আর এই আলাপটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা ও প্রক্টর স্যারের সামনেই হয়েছে। বরং দোলনচাঁপা মহিলা হল প্রভোস্ট ছাত্রী প্রতিনিধিদের না জানিয়ে একতরফাভাবে খাবারের আয়োজন করেছে। এতে হলের ছাত্রীরা ক্ষুব্ধ হয়েছে।

দোলনচাঁপা মহিলা হল প্রভোস্ট সিরাজুম মুনিরা জানান, একজন শিক্ষক ও প্রভোস্টের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয়, সেটা ভুলে গিয়ে হুমকি দিয়ে আমাকে ছাত্রদের হলে যেতে বললে আমি সেখানে যাইনি।

প্রভোস্ট সিরাজুম মুনিরা আরও বলেন, আমি ও দুইজন হাউজ টিউটর এবং ছাত্র উপদেষ্টা ও প্রক্টর স্যার ছাত্রলীগ নেতাদের সাথে কথা বলতে যাওয়ার সময় অন্য একজন ছাত্র এত উত্তেজিত হয়ে আমাদের নানা হুমকি দিতে থাকে। ছাত্র উপদেষ্টা তপন কুমার সরকার ও প্রক্টর ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান আমাদের কাছে এলে আমরা ছাত্রলীগ নেতাদের সাথে কথা বলি। এসময় ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক রাকিব দোলনচাঁপা হলের খাবারের জন্য পুরো টাকা তার হাতে তুলে দিতে বলে।

প্রভোস্ট বলেন, আমরা খাবারের জন্য ৬১ হাজার টাকা ও অন্যান্য উপহার সামগ্রী যোগার করি। আমরা খাসি ও পোলাও চালসহ সবকিছু কিনে ফেলেছি। ছাত্রীদের খাবারের টোকেনও দেওয়া হয়েছে। সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ছাত্রীদের সারপ্রাইজ দিতে উপহার দেওয়ার জন্য ঢাকা থেকে নানা উপহার সামগ্রীও কেনা হয়েছে।

এতে ছাত্রলীগ নেতারা আরো বেশী উত্তেজিত হয়ে বলে খাসি ও অন্যান্য সামগ্রী বিক্রি করে তাদের হাতে পুরো টাকা তুলে দিতে হবে। তারা (ছাত্রলীগ নেতারা) বলেন, ছেলেদের হলের সাথে একসাথে আয়োজন করবে। শুধু ছাত্রলীগ সংগঠন যারা করে তারা সবাই মাঠে বসে একসাথে খাবে। আর যারা সাধারণ শিক্ষার্থী এবং যারা ছাত্রলীগ করে না, তাদের খাসি খাওয়ার অধিকার নেই।

ছাত্রলীগ নেতারা আরো তাদের জানায়, দোলনচাঁপা হলে যত সিট আছে সব পলিটিক্যাল সিট হবে। যারা ছাত্রলীগ করবে না তারা হলের সিটে থাকতে পারবে না এবং থাকতে দেওয়া হবে না।

প্রভোস্ট সিরাজুম মুনিরা বলেন, ‘আমরা যতটা সহনশীলভাবে বলা দরকার ঠিক ততটা সহনশীলভাবে বলেছি। কিন্তু তারা (ছাত্রলীগ) নানা হুমকি-ধমকি দিতে থাকে। তারা বলে, ছাত্রলীগ সেক্রেটারির কথামত না চললে কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে পারবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের গাছ-পাতা, পানি সব নড়ে রকিবের ইশারায়। ১০ বছর ধরে ক্যাম্পাসে সব সিস্টেম তৈরি করছি আমি (রকিব)। আমি যাকে প্রভোস্ট চাইব সে প্রভোস্ট হবে। আপনাকে (সিরাজুম মুনিরা) আমি (রকিব) আর মেনে নিতে পারছি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ ঘটনার সময় ছাত্র উপদেষ্টা ও প্রক্টর স্যার ঠাঁয় দাড়িয়ে রইলেন। তারা ছাত্রলীগ নেতাদের সামনে কিছুই বললেন না। নিরুপায় হয়ে আমরাও তাদের হুমকি-ধমকি খেয়ে চলে গেলাম। এ ঘটনাটি ১৪ ডিসেম্বর বিকেলে ক্যাম্পাসে ঘটেছে। এ নিয়ে ১৫ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ে দফায় দফায় মিটিং হয়েছে। আমিসহ ৪ জন হাউজ টিউটর একসঙ্গে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমরা এই অরাজক পরিস্থিতিতে দায়িত্ব পালন করতে পারব না। তাই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ১৫ ডিসেম্বর বিকেল পৌনে ৫টায় হল প্রশাসন থেকে পদত্যাগ করে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেছি।