বাংলাদেশে কওমী মাদ্রাসাগুলোকে সরকারের নিবন্ধনের আওতায় আনা এবং এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রমের ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি সমন্বিত নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে।
তবে কওমী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সরকারের কাছে নিবন্ধনের প্রস্তাবে রাজি নয় বেসরকারি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের নেতৃত্ব।
তারা বলেছেন, নিবন্ধনের আওতায় এনে সরকারের তদারকি বাড়ানো হলে কওমী মাদ্রাসা শিক্ষার স্বকীয়তা থাকবে না।
সেজন্য তারা সরকারের কাছে নিবন্ধনে রাজি নন।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা যাতে কর্মক্ষেত্রের জন্য যোগ্য এবং দক্ষ হয়ে গড়ে ওঠে, সেজন্য এই শিক্ষা কার্যক্রমকে যুগোপযোগী করার বিষয় সরকার বিবেচনা করছে।
কওমী মাদ্রাসা শিক্ষায় কোন শৃঙ্খলা নেই-এমন অভিযোগ বিভিন্ন সময়ই আলোচনায় এসেছে। এনিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনেও অনেক বিতর্ক হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও কওমী মাদ্রাসার কার্যক্রম খতিয়ে দেখে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
সরকার কী করতে চাইছে
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কওমী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের বোর্ড এবং সরকারের কোন পর্যায়ের প্রশাসনের কোন অনুমতির প্রয়োজন হয় না। এছাড়া সুনির্দিষ্ট কোন নিয়ম বা নীতিমালাও নেই।
সরকারের একটি কমিটি খতিয়ে দেখেছে যে, শহর থেকে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত অনেক কওমী মাদ্রাসা গড়ে উঠেছে কোনভাবে একটি ঘর ভাড়া করে। যেখানে শিক্ষার পরিবেশ নেই।
এছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সরকার কওমী মাদ্রাসার সর্বোচ্চ দাওরায়ে হাদিস ডিগ্রিকে মাস্টার্স এর মর্যাদা দিয়েছে। এর ভিত্তিতে কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন চাকরিতে প্রবেশের বা কর্মক্ষেত্র খুঁজে নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে।
সেকারণে এই শিক্ষাকে একটা নিয়মের মধ্যে আনতে নিবন্ধনের ব্যবস্থাসহ একটি সমন্বিত নীতিমালার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
সাধারণ শিক্ষা, ইংরেজী মাধ্যমসহ সব ধরনের শিক্ষার জন্য সরকার একটি শিক্ষা আইনের খসড়া তৈরি করেছে।
সেই খসড়ায় কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা নিয়েও সুনির্দিষ্ট বিধান রাখা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বিবিসিকে বলেছেন, দেশের সার্বিকভাবে সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্যই কিছু নিয়ম থাকা প্রয়োজন।
সরকারি নিবন্ধনে রাজি নয় কেন
কওমী মাদ্রাসাগুলোর সবচেয়ে বড় শিক্ষা বোর্ড বেফাক এর সভাপতি মাহমুদুল হাসান বিবিসিকে বলেছেন, তাদের সাথে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আলোচনায় বসে সরকারের কাছে মাদ্রাসার নিবন্ধনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তারা সেই প্রস্তাবে রাজি হননি।
মি. হাসান মনে করেন, তারা তাদের অবস্থানের ব্যাপারে সরকারকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন।
তিনি উল্লেখ করেছেন, তাদের স্বকীয়তা রক্ষায় সরকার কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না বলে তাদেরকে জানানো হয়েছে এবং সরকারের কাছে নিবন্ধনের ব্যাপারে তাদের আর কিছু বলা হয়নি।
কিন্তু তাদের এমন অবস্থানের পেছনে যুক্তি কী -এই প্রশ্নে মাহমুদুল হাসান বলেন, সরকারের সরাসরি নিবন্ধনের ব্যবস্থা না থাকলেও কওমী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার পর তাদের বেসরকারি মাদ্রাসা বোর্ডের কাছে নিবন্ধন করতে হয়।
"বেসরকারিভাবে বেফাকসহ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড যেগুলো রয়েছে, কওমী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার পর তাদের কাছে নিবন্ধন করতে হয়। এক বছর পর পর এই নিবন্ধনের তালিকাসহ প্রতিবেদন আমরা বেফাকের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে পেশ করি" বলেন বেফাক এর সভাপতি মি. হাসান।
তিনি দাবি করেন, কোন কওমী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার পর তার নিবন্ধনের জন্য মাদ্রাসা বোর্ডের কাছে আবেদন করা হলে, তখন প্রতিষ্ঠাতা ও অর্থের যোগানের ব্যাপারে তথ্য নেয়া হয়। এছাড়া তাদের মাদ্রাসা বোর্ড আবেদনকারী মাদ্রাসা পরিদর্শন করে শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করে এবং এরপর তারা নিবন্ধন দিয়ে থাকেন।
নিবন্ধনের প্রশ্নে সরকারি গেজেট
কওমী মাদ্রাসা গুলোর বেসরকারি শিক্ষা বোর্ড রয়েছে ছয়টি। এর মধ্যে বেফাক সবচেয়ে বড় বোর্ড।
এই বেফাকের আরেকজন কর্মকর্তা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৮ সালে যখন দাওরায়ে হাদিস ডিগ্রিকে মাস্টার্স সমমানের মর্যাদা দিয়েছে, তখন মাদ্রাসার ছয়টি বেসরকারি বোর্ডের নেতৃত্বকে সমন্বয় করে আল-হাইআতুল উলয়া লিল জামি'আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ নামের সর্বোচ্চ একটি বোর্ড গঠন করে দেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে।
বেফাক কর্মকর্তা আরও বলেছেন, এ ব্যাপারে সরকারি গেজেট আছে এবং ২০১৮ সালেই সংসদে কওমী মাদ্রাসার স্বকীয়তা এবং স্বাধীনতা দিয়ে আইনও পাস করা হয়েছে। তাতে সর্বোচ্চ বোর্ডকেই নিবন্ধনের দায়িত্ব দেয়া হইছে।
0 মন্তব্যসমূহ
A New Comment
Emoji